মূলত রাসুল (সাঃ) এর যুগে বৃহত্তর খোরাসান বলতে এর সীমানা নিম্ন লিখিত ভূখণ্ডের সমষ্টিকে বুঝায়, যার মূল কেন্দ্র হচ্ছে বর্তমান আফগানিস্তান।
বিস্তৃতি নিম্নরূপঃ
“উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান (হেরাত, বালখ, কাবুল, গাজনি, কান্দাহার দিয়ে বিস্তৃত), উত্তর ও দক্ষিন-পূর্ব উজবেকিস্তান (সামারকান্দ, বুখারা, সেহরিসাবজ, আমু নদী ও সীর নদীর মধ্যাঞ্চল দিয়ে বিস্তৃত), উত্তর-পূর্ব ইরান (নিশাপুর, তুশ, মাসহাদ, গুরগান, দামাঘান দিয়ে বিস্তৃত), দক্ষিন তুর্কমেনিস্তান (মেরি প্রদেশ – মার্ভ, সানজান), দক্ষিন কাজিকিস্তান, উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তান (মালাকান্দ, সোয়াত, দীর ও চিত্রাল), উত্তর পশ্চিম তাজিকিস্তান (সুগ্ধ প্রদেশের খোজান্দ, পাঞ্জাকেন্ত দিয়ে বিস্তৃত)”।
আসুন, প্রথমে আমরা খোরাসান ও সেখান থেকে বাহিনী বের হওয়া, ইমাম মাহদির নিকট বাইয়াত গ্রহণের ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা এবং সেই খোরাসানী বাহিনীর গন্তব্য সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।
আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“পূর্বদিক (খোরাসান) থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসবে, যারা ইমাম মাহদির খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা সহজ করে দিবে”।
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৩, হাদিস নং ২৮৯৬; সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ৩, হাদিস নং ৪০৮৮)
অপর বর্ণনায়, হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যখন তোমরা দেখবে, কালো পতাকাগুলো খোরাসানের দিক থেকে এসেছে, তখন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যেও। কেননা, তাদেরই মাঝে আল্লাহর খলীফা মাহদি থাকবে”।
(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৭৭; কানজুল উম্মাল, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৪৬; মিশকাত শরীফ, কেয়ামতের আলামত অধ্যায়)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম।
উনি বলতে ছিলেন,
“ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে (হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন)। তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা সত্যের (পূর্ণ ইসলামী শাসনের) দাবী জানাবে, কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে না। দুইবার বা তিনবার এভাবে দাবী জানাবে, কিন্তু তখনকার শাসকগণ তা গ্রহণ করবে না। শেষ পর্যন্ত তারা (ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব) আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদির) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায় এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরে দিবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে ভরে দেওয়া হয়েছিল।
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময় জীবিত থাকো, তবে অবশ্যই তাদের দলে এসে শরীক হয়ে যেও – যদিও বরফের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে আসতে হয়”।
(আবু আ’মর আদ দাইনিঃ ৫৪৭, মুহাক্কিক আবু আবদুল্লাহ সাফেঈ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)
হযরত হাসান (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিবারস্থ (আহলে বাইত) লোকদের উপর আশু বিপদাপদের বর্ণনা দিচ্ছিলেন,
“শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পাক পূর্বদিক থেকে কালো পতাকাবাহী লোকদেরকে পাঠাবেন। যারা ঐ কালো পতাকাবাহী লোকদেরকে সাহায্য করল, আল্লাহ তায়ালাও তাকে সাহায্য করবেন।
যে তাকে ছেড়ে দিল, আল্লাহ তায়ালাও তাকে ছেড়ে দেবেন। তারপর ঐ কালো পতাকাবাহী দল এমন এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) এর কাছে আসবে – যার নাম আমার নামের মতো হবে। তারা ঐ ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) এর উপর শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব সোপর্দ করবে। সুতরাং, আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে সহযোগিতা করবেন”।
(আলফিতান, নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদঃ ৮৬০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। এ সময়ে বনু হাশিমের কয়েকজন যুবক এসে হাজির হল। তাদের দেখার পর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখদুটো লাল হয়ে গেল এবং চেহারার রং বদলে গেল।
বর্ণনাকারী বলেন, এই অবস্থা দেখে আমি বললাম, ‘আমরা আপনার চেহারায় অপ্রীতিকর কিছু দেখতে পাচ্ছি যে!’
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“আমরা আহলে বাইতের জন্য আল্লাহ দুনিয়ার পরিবর্তে আখিরাতকে নির্বাচন করেছেন। আমার পরিবারের সদস্যরা আমার অবর্তমানে বিপদ, দেশান্তর ও অসহায়ত্বের শিকার হবে। এমনকি পূর্ব দিক থেকে এমন কিছু লোক আগমন করবে, যাদের পতাকা হবে কালো।
তারা কল্যাণ (নেতৃত্ব) প্রার্থনা করবে; কিন্তু এরা (বনু হাশিম) দেবে না। অগত্যা তারা যুদ্ধ করবে ও জয়লাভ করবে। এবার তারা যা (নেতৃত্ব) প্রার্থনা করেছিল, (বনু হাশিম) তা প্রদান করবে। কিন্তু এবার তারা তা (নেতৃত্ব) গ্রহণ না করে আমার বংশের এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) কে তা (নেতৃত্ব) ফিরিয়ে দিবে। সেই ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) পৃথিবীটাকে ন্যায়নীতি দ্বারা এমনভাবে ভরে দিবে, যেমনটি পূর্বে তা অবিচারে পরিপূর্ণ ছিল। তোমাদের যে লোক সেই সময়টি পাবে, সে যেন উক্ত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যায় বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হলেও”।
(সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৬)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যখন কালো পতাকাগুলো পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে বের হবে, তখন কোন বস্তু তাদেরকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। এমনকি এই পতাকাকে ইলিয়ায় (বাইতুল মুকাদ্দাসে) উত্তোলন করা হবে (খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে)”।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২২৬৯;মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৮৭৬০)
প্রতিহত করতে না পারলেও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা তৈরির ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। ইমাম জুহরি বলেছেন, আমার কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে,
“খোরাসান থেকে কালো পতাকা বের হবে। সেটি যখন খোরাসানের ঘাঁটি থেকে অবতরণ করবে, তখন ইসলামের খোঁজে অবতরণ করবে। কোন বস্তু তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না অনারবদের পতাকাগুলো ব্যতীত, যেগুলো পশ্চিম দিক থেকে আসবে”।
(কানাজুল উম্মাল, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ১৬২)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে অবশ্যই কালো পতাকাবাহী দল আসবে। ঘোড়ার সিনা পর্যন্ত রক্তে ডুবন্ত থাকবে”।
(মাজমাউজ জাওয়াইদ)
হযরত বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার পরে অনেক বাহিনী আসবে। তোমরা অবশ্যই খোরাসানের বাহিনীতে যোগ দিবে”।
(ইবনে আদি)
ইমাম যুহরি বলেছেন,
“পূর্ব থেকে কালো পতাকা এগিয়ে আসবে, যাদের নেতৃত্ব দেবে এমন এক দল লোক, যারা হবে ঝুলপরিহিত খোরাসানি উস্ট্রীর মতো, লম্বা চুল ও দাঁড়ি বিশিষ্ট। তাদের বংশ হবে গ্রামীণ আর নাম হবে উপনাম। তারা দামেস্ক নগরীকে জয় করবে। তাদের থেকে তিন ঘণ্টার জন্য রহমত প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে”।
(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৬)
খোরাসান থেকে বের হওয়া এই কালো পতাকাবাহী এই বাহিনী ইমাম মেহেদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণের পূর্বে ইরাকের কুফা নগরীতে সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসকের (হাদিসের বর্ণনাগুলোতে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে এসেছে) মোকাবিলা করবে।
আরতাত (রাঃ) বলেন,
“সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের (কুফাবাসীদের) সম্পদগুলো বণ্টন করবে। তাদের (কুফাবাসীদের) মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানে একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে।
অতঃপর মাহদি ও মানসুর (একজন সেনাপতি) উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানি উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে।
কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে”।
(আল ফিতানঃ ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)
‘মানসুর’ সম্পর্কে হযরত হিলাল ইবনে আমর বর্ণনা করেন, আমি হযরত আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“এক লোক মা-আরউন্নহর (নদীর ওপার) থেকে রওনা হবে, যার নাম হবে হারছ হাররাছ। তার বাহিনীর সম্মুখ অংশের সেনাপতির নাম হবে মানসুর, যে (খেলাফত বিষয়ে) মুহম্মদ বংশের জন্য পথ সুগম করবে বা শক্ত করবে, যেমনটি কুরাইশ আল্লাহর রাসুলকে ঠিকানা দান করেছিল। তার সাহায্য সহযোগিতা করা কিংবা তার ডাকে সাড়া দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য বলে বিবেচিত হবে”।
(সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং ৪২৯০)
আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে ইসলামের পরিভাষায় ‘মা-আরউন্নহর’ বা ‘নদীর ওপার’ বলা হয়। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ।
মুহম্মদ বিন হানাফিয়্যা (রহঃ) বলেন,
“বনু আব্বাস থেকে পতাকাবাহী দল বের হবে। অতঃপর খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী অন্য আরেকটি দল আত্মপ্রকাশ করবে। তাদের পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের হবে এবং জামা সাদা বর্ণের হবে। কালো পতাকাবাহী দল সুফিয়ানি (সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসক) এর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে দেবে। শেষ পর্যন্ত তারা বাইতুল মুকাদ্দাসে এসে উপস্থিত হবে এবং তাদের নেতৃত্ব ইমাম মাহদির হাতে সোপর্দ করে দেবে। তাদের কাছে সিরিয়া থেকে তিনশত লোক আসবে।
এদের (খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী) বের হওয়া এবং মাহদির হাতে নেতৃত্ব সোপর্দ করার মাঝে ৭২ মাসের (৬ বছরের) ব্যবধান থাকবে”।
(কিতাব আল ফিতানঃ ৮৫১, দুর্বল হাদিস)
হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি”।
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন,
“তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদি”।
(সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন,
“কালো পতাকা পূর্ব দিক থেকে আর হলুদ পতাকা পশ্চিম দিক থেকে আগমন করবে। সিরিয়ার কেন্দ্রভূমি তথা দামেস্কে উভয় পক্ষের মোকাবিলা হবে”।
(আল ফিতান, নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ)
উমর বিন মুররাহ আল জামালী (রাঃ) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“নিশ্চই খোরাসান থেকে একদল কালো পতাকাবাহী লোকের আবির্ভাব ঘটবে এবং তাঁদের একদল তাঁদের ঘোড়াগুলো দড়ির সাহায্যে বাইতাল লাহ্যিয়া (গাজা, ফিলিস্তিন) এবং হারাস্তার (দামেস্ক, সিরিয়া) মধ্যবর্তী স্থানে জাইতুন গাছের সাথে বাধবে”।
আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সেখানে কি কোন জাইতুন গাছ আছে’? তিনি বলেন, “যদি সেখানে জাইতুন গাছ নাও থাকে তাহলে শীঘ্রই সেখানে জাইতুন গাছ জন্মাবে এবং খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী দল বের হয়ে আসবে এবং তারা তাঁদের ঘোড়াগুলো এইসব জাইতুন গাছের সঙ্গে বাঁধবে”।
(কিতাব আল ফিতানঃ ৮৬১, পৃষ্ঠা ২১৫, দুর্বল হাদিস)
উপরের সবগুলো হাদিস সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করলে যেটা প্রতীয়মান হয়, তা হলঃ
>খোরাসানের থেকে যে বাহিনীটি বের হবে তাদের হাতে কালো পতাকা থাকবে।
>তাদের পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের হবে এবং জামা সাদা বর্ণের হবে।
>তাদের পোশাক ঢিলে ঢালা হবে, চুল ওয়ালা হবে, তাদের বংশ গ্রামীন হবে।
>আসল নামের পরিবর্তে তারা উপনামে পরিচিত হবে।
>যদিও তাদের কেউ প্রতিহত করতে পারবে না, কিন্তু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে পশ্চিমা শক্তি।
>তারা এ সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে ঠিকই খোরাসান থেকে বের হয়ে ইরাকের দিকে এগুবে।
>এরপর তাদের (কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের দলের) কোন এক নেতা যার নাম হবে ‘মানসুর’, সে ইমাম মাহদিকে সহায়তা করবে। মানুষদেরকে তার দিকে ডাকবে।
>এক পর্যায়ে এই কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের সঙ্গে ইমাম মাহদি (যদিও তখনও তার আত্মপ্রকাশ ঘটেনি, শুধু কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের দলে মিশে আছেন) নিয়েই মক্কাতে পৌছবে।
>সেখানে কোন এক খলীফার তিনপুত্রের দ্বন্দের প্রেক্ষিতে যখন হজ্জ মৌসুমে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এবং তার সাথে উপস্থিত থেকে এই খোরাসানের কালো পতাকাবাহীরাই প্রথম বাইয়াতের সৌভাগ্য অর্জন করবে। (পরবর্তীতে ঘটনার পরিক্রমায় সিরিয়ার ‘আবদাল’ বা শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ ও ইরাকের ‘আসাইব’ বা সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ মক্কায় এসে ইমাম মাহদির নিকট বাইয়াত হবে)।
>এরপর এই খোরাসানের কালো পতাকাবাহী বাহিনীসহ ইরাকে গমন করে সে অঞ্চলকে মুক্ত করবেন।
>পরে তিনি সিরিয়ার অভিমুখে যাত্রা করে বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসক এর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে দেবে। (যা হাদিসে ‘কালবের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত)।
>যেহেতু এই বাহিনী ইমাম মাহদির নেতৃত্বাধীন থাকবে, হাদিসে বর্ণিত সকল যুদ্ধেই এই কালো পতাকাবাহী খোরাসানি বাহিনীর সকল যোদ্ধা ইরাক, বৃহত্তর সিরিয়া (সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, প্যালেস্টাইন, বাইতুল মাকদিস বা জেরুজালেম) তে কাল্বের যুদ্ধ, পেছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ, রোমানদের (পশ্চিমা খ্রিস্টানদের) সাথে মহাযুদ্ধ থেকে শুরু করে ইস্তাম্বুল বিজয় পর্যন্ত সব যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে।
কারণ, তারা ইমাম মাহদির খেলাফত প্রতিষ্ঠাকে সহজ করে দিবেন। এবং সর্বশেষে সকল বিজয়ের পর যখন জেরুজালেমে খেলাফত প্রতিষ্ঠা হবে, তখন তারা সেখানে এই কালো পতাকা উড়িয়ে তাদের ঘোড়াগুলোকে জাইতুন গাছের সাথে বেধে তারা ক্ষান্ত হবে।
যেহেতু খোরাসানের এই বাহিনী ইমাম মাহদির সঙ্গী হবে তাতে বুঝা যায় যে, এটি শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, খোরাসান থেকে যে বাহিনীই কালো পতাকা নিয়ে বের হোক না কেন তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না।
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)।
অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) ।
তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”।
(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)
আর তাছাড়া অপর হাদিসে, হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) এবং মু’আজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাদের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাদের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম (সিল্ক), ব্যভিচার (পরকীয়ার পাশাপাশি বয়ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ডের নামে চলমান বহুল প্রচলিত সামাজিকভাবে স্বীকৃত উঠতি বয়সী অবিবাহিতদের জেনা) এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে”।
(শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি, ৫/১৬)
উপরের হাদিসদ্বয়ের প্রেক্ষিতে আমরা যে যুগের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি, তা হচ্ছে অন্যায়, অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়ার যুগ। আল্লাহ তা’আলার জমিনে সর্বোচ্চ শাসন ব্যাবস্থা (sovereignty) একমাত্র আল্লাহর হওয়া উচিৎ। যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কানুন ব্যতীত মানুষের তৈরি কোন কানুন বাস্তবায়নের অপচেস্টা চালানো হয়, তবে অবশ্যই জমিনে অন্যায় অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদে ভরে যাবে।
১৯২৪ সালে উসমানি খেলাফতের ভেঙ্গে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ ৫৭ টি ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে বর্তমানে একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকদের দ্বারা শাসিত। ‘অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে’ – মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিই প্রমাণ করে সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে।
রাজত্বের লাগাম মুসলিমদের হস্তগত হবে। কখনো এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, বিভিন্ন বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা যথা সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিহাসে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এবং আমরা সেই রকমই একটি ‘ট্রাঞ্জিকশন ফেজ’ এ আছি।
এবার আমরা খোরাসানের দিকে তাকাই।
আশির দশকে খোরাসানের কেন্দ্রস্থল আফগানিস্তান সমাজতন্ত্র নামক পাগলা ঘোড়ার সওয়ার তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা আক্রান্ত হয়।
দীর্ঘ দশ বছরের (১৯৭৯ – ১৯৮৯) যুদ্ধের পর পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন শুধু পরাজিতই হয়নি, কয়েক বছরের মাথায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলো যাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘মা-আরউন্নহর’ বা ‘নদীর ওপার’ বলা হয়, সে সব দেশঃ উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ, সমাজন্ত্রমুক্ত হয়ে স্বাধীনভূখণ্ডরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
যদিও এই যুদ্ধকে মুসলিম জাহান ধর্মযুদ্ধ হিসাবে গ্রহণ করে এবং ‘সে যেন উক্ত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যায় বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হলেও’ এর উপর আমল করার মতোই সকল মুসলিম ভূখণ্ড হতে মুজাহিদরা আগমন করে।
যদিও এদের কারও হাতেই কালো পতাকা ছিল না।
১৯৮৯ সালে রাশিয়ানরা ফিরে গেলে তাদের দালালদেরকে কাবুল থেকে হটিয়ে ১৯৯২ সালে ইসলামিক স্টেট অফ আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে একটি রঙ্গিন পতাকা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকের মধ্যে পশ্চিমারা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। আর একে কেন্দ্র করে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয় এবং দেশের আইন শৃঙ্খলার ব্যপক বিপর্যয় দেখা যায়।
একদিকে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের পুনর্গঠনের চ্যলেঞ্জ অন্যদিকে যুদ্ধ ফেরত নেতাদের ‘রকমারি বাদ আর তন্ত্র’ এর উপর ভিত্তি করে ক্ষমতার লড়াই।
অবশেষে গ্রাম্য এক কওমি মদ্রাসার শিক্ষক গুটি কয়েক দরিদ্র ছাত্রদের নিয়ে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। একের পর এক প্রদেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে।
অবশেষে ১৯৯৬ সালে কাবুলের নিয়ন্ত্রন নেওয়ার পর তারা দেশের আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রনের ঘোষণা দেয়। জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত রঙ্গিন পতাকা হটিয়ে উড়িয়ে দেয় ইসলামিক ভূখণ্ডের সত্যিকার পতাকা ‘লিওয়া’ – সাদার ভিতরে কালো রঙ্গের কালিমা খচিত। আর সেনাবাহিনীর পতাকা হল ‘ আর রায়া’ – কালোর ভিতরে সাদা রঙ্গের কালিমা খচিত।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যুদ্ধের সময় কালো পতাকা ব্যবহার করতেন, যা ‘উকাবা’ নামে পরিচিত।
শুরু হল খোরাসানের কেন্দ্রস্থলে কালো পতাকাবাহী দলের যাত্রা। পশ্চিমা বিশ্ব হারালো তাদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রন। শুরু হল দাজ্জালি মিডিয়ার প্রচার যুদ্ধ। মিডিয়াতে দেখাতে লাগলো এই দলকে। কিন্তু এ কারা। জামা সাদা বর্ণের আর পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের। পোশাক ঢিলে ঢালা , অনেকেই চুল ওয়ালা, পশ্চিমা মিডিয়াই বিশ্বকে জানিয়ে দিল এরা সব পশ্চাৎপদ গ্রামীন। মাদ্রাসার ছাত্র। আরবীতে বলে ‘তালিব এ ইলম’। আর বহু বচন ‘তালিবান’। আর পশ্চিমা মিডিয়া বিশ্বের সামনে এদেরকে এই ‘তালিবান’ উপনামে পরিচয় করিয়ে দিল (আসল নামের পরিবর্তে তারা উপনামে পরিচিত হবে)।
এখন পর্যন্ত ৪৯ টি দেশের অনেকেই চলে গেছে আফগানিস্তান ছেড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালের শেষ পর্যন্ত সকল সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছে।
২০১৪ সালে সকল বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের পর যদি আফগানিস্তান এই কালো পাগড়ী সাদা জামা ওয়ালা কালো পতাকামুক্ত হয়, তাহলে এরা হাদিস মোতাবেক সেই বাহিনী নয়। কিন্তু যদি এর পরে তারা আবার ক্ষমতা নিয়ে নেয়, তাহলে তারা ৪৯ টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত সেই পশ্চিমা জোট বাহিনীর পরাজয় আর মাইক দিয়ে বাড়ি বাড়ি বলতে হবে না, এরা হাদিসের শর্ত ‘যদিও তাদের কেউ পূরণ করে ফেলবে।
খেয়াল করার বিষয় হল, আফগানিস্তানে ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশরা হামলা করল কিন্তু তারা পরাজিত হল। এরপর রাশিয়া হামলা করল, এবং রাশিয়া নিজেই ধ্বংস হয়ে গেল। এরপর ইউরোপিয়ানরা আফগানিস্তানের যুদ্ধ করতে এসে পুরো দেশ ভেঙে তছনছ হয়ে গেল। এমনকি ভুস ১৮ বছর যুদ্ধ করার পর পরাজিত হয়ে নাকে খর মেখে আফগানিস্তান দের কাছে নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে চলে গেছে।
নবীজি সা. বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে কালো পতাকা নিয়ে তারা ফিলিস্তিনি ফিরবে। এবং এদের মধ্যে তখন ইমাম মাহাদী আঃ থাকবে। তারা বিজয়ের পতাকা ফিলিস্তিনে নিয়ে গারবে , এবং তখন তাদের সামনে পৃথিবীর কোন শক্তি এসে দাঁড়াতে পারবেনা। এরা ফিলিস্তিনে যখন নিজেদের খেলা পথ তৈরি করবে , তখন সেখান থেকে ভারত যাওয়ার জন্য বাহিনীদের পাঠাবে।
ওই বাহিনী হিন্দুস্থানের সব রাজন্যবর্গ কে লোহার শিকলে বন্দী করে ফিলিস্তিনে নিয়ে যাবে। তারা সেখানে গিয়ে দেখবেন, ততক্ষণে ঈসা আলাই সালাম দুনিয়াতে নেমে এসেছে। হিন্দুস্থানে আগে অনেক যুদ্ধ পার হয়ে গেছে। কিন্তু নবীজী সাঃ সেই যুদ্ধের কথা বলেননি, কেয়ামতের আগে যে যুদ্ধ হবে এবং সে যুদ্ধে যে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নাম থেকে মাফ করবেন। তারা কেউ জাহান্নামে যাবে না।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের দুই দল লোকদের জাহান্নাম থেকে আল্লাহতালা মুক্ত করে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একদল হল যারা হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে লড়বে। এবং সে বাহিনী হিন্দুস্তান থেকে যুদ্ধ করে ফিলিস্তিনে যাবে, এবং যাওয়ার পর দেখবে ঈসা আলাই সাল্লাম আসমান থেকে দুনিয়াতে নেমে এসেছেন। ঈসা আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে আসবেন ইমাম মাহদী আলাইহিস সাল্লাম এর পর। তখন দাজ্জালও পৃথিবীতে থাকবে।
হযরত আরতাত (রাঃ) বলেন, “দ্বিতীয় সুফিয়ানির জামানায় বিকট এক আওয়াজ আসবে। আওয়াজটি এতই বিকট হবে যে, প্রত্যেক গোত্রই মনে করবে – তাদের নিকটবর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে।” (আল ফিতান, ৮৫০)
তাই, কোন উপসংহারে না পৌঁছালেও বিশ্বাসী বান্দা হিসাবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে হাদিসে বর্ণিত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর।
Social Plugin