হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, শেষ যমানায় পুরো পৃথিবী ব্যাপী একটি যুদ্ধ হবে। এটা হবে দুইটি বড় যুদ্ধের পর তৃতীয় যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধে অনেক মানুষ ধ্বংস হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে ব্যাক্তি আগুন জ্বালিয়ে দিবে সেই হবে মহান নেতা। হিজরী ১৩ শতাব্দীর কয়েক দশক পর গ্রীক রাজা সমগ্র বিশ্বের বিপক্ষে যুদ্ধ করবেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে যুদ্ধের নির্দেশ দিবেন।
এর দুই দশক পর জার্মান ভূমি থেকে বিড়ালের নামের সাথে মিল রয়েছে এরকম একজনের (হিটলার) আবির্ভাব হবে। সে রোমানদের বিপক্ষে চাবুক নিয়ে হাজির হবে এবং লোকজনের নির্যাতন করা শুরু করবে এবং পুরো পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে। সে সমগ্র বিশ্বের বিপক্ষে যুদ্ধ শুরু করবে, এমনকি উষ্ণ অঞ্চল (আফ্রিকার সাহারা মরু) ও শীতল (রাশিয়ার সাইবেরিয়া) অঞ্চলেও যুদ্ধ করবে।
সে যখন যুদ্ধক্ষেত্রকে আগুন দ্বারা পরিপূর্ণ করবেন, আর তখনই সে আল্লাহ তায়ালার শাস্তির মুখোমুখি হবে, সে রাশিয়ান গুপ্ত ঘাতক দ্বারা খুন হবে। তারপর হিজরী ১৩ শতাব্দীর সাথে আরো পাঁচ, ছয়, সাত, আট দশক গণনা করার পর মিশরে একজন ব্যক্তি (জামাল আবদেন নাসের) আসবে, যাকে আরবরা সুচ্চাউল আরব বা, আরবের সাহসী ব্যাক্তি বলে ভূষিত করবে এবং যাকে "নাসের" বলা হবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে দুই বার অবজ্ঞা করবেন, একবার যুদ্ধে তারপর আবার।
"নাসের " কখনো বিজয়ের দেখা পাবে না। তখন সমস্ত ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তায়ালা একজন কালো ব্যাক্তি (আনোয়ার সাদাত) কে পাঠাবেন, যার পিতা তার তুলনায় উজ্জ্বল বর্নের। আরব ও মিশরের নেতা মসজিদুল আকসা ছিনতাই কারীর সাথে একটি চুক্তি করবেন। তারপর ইরাকে একজন নিষ্ঠুর শাসকের আবির্ভাব হবে, যে দামেস্কের নিকটবর্তী এলাকায় থাকবে, তার চোখে সামান্য আঘাতের চিহ্ন থাকবে, সেই হল সুফিয়ানী।
সে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, পুরো পৃথিবী থেকে তার জন্য লোকজন একত্রিত হবে, কারণ তার সাথে আগে প্রতারণা করা হয়েছিল। সুফিয়ানীর জন্য ইসলাম ছাড়া এরচেয়ে ভালো কিছু থাকবে না, তার মধ্যে খারাপ ভালো দুটি জিনিসই থাকবে, যদিও সে মাহদীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। তারপর হিজরী ১৪ শতাব্দীর সাথে দুই বা, তিন দশক গণনা করবে, ঐ সময় মাহদীর আবির্ভাব হবে। সে পুরো পৃথিবীর সকলের বিরুদ্ধে, যারা বিপথগামী হয়ে গেছে (খ্রিস্টানরা) এবং যারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র (ইহুদীরা) এবং তাদের সাথে ব্যভিচার ও প্রতারণার রানী (আমরিকা) যার পুরো পৃথিবীকে অবিশ্বাসী ও দ্বিধা বিভক্ত করতে চেষ্টা করে, তারা ইসরা ও মিরাজের ভূমি (ফিলিস্তিন) পর্বতের নিকটে আসবে।
তখন ইহুদীরা পৃথিবীতে ভালো অবস্থানে থাকবে, তারা বাইতুল মোকাদ্দাস ও পবিত্র (জেরুজালেম) শহর শাসন করবে। তারা সমুদ্র ও আকাশ পথে তীব্র শীতল অঞ্চল (সাইবেরিয়া) ও তীব্র উষ্ণ অঞ্চল (সাহারা) ছাড়া সবাই তার (মাহদীর) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। মাহদী দেখবে পুরো পৃথিবী তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং সে একই সাথে আল্লাহ্র পরিকল্পনাও দেখবে, যা কাফেরদের ষড়যন্ত্রের তুলনায় অনেক শক্তিশালী।
সে দেখবে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর শাসন ক্ষমতা তার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এবং পৃথিবীটা হল একটা গাছের মত, যার মূলে রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। তিনি সকল অবিশ্বাসী জাতিকে কঠিন দুর্যোগে নিক্ষেপ করবেন এবং তাদেরকে শাস্তি দিবেন। কাফেরদের ভূমি, সমুদ্র ও আকাশ পথকে জ্বালিয়ে দিবেন। অবিশ্বাসী জাতির জন্য আকাশ থেকে ক্ষতিকর বৃষ্টি নিক্ষেপ করা হবে এবং আল্লাহ তায়ালা অবিশ্বাসী জাতিদের কে ধ্বংস করে দিবেন।
(আসমাউল মাসালিক লি ইয়াওমিল মাহদীয়া মালিকি লি কুল্লিদ দুনিয়া বি আমরিল্লাহিল মালিক, লেখকঃ কালদা বিন যায়েদ, পৃষ্ঠা -২১৬)
এবার আমরা হাদিসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলো একটু বিস্তারিত আলোচনা করব। যাতে সবাই হাদিসের প্রতিটি লাইন আরো সহজে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন।
পয়েন্ট - ১ঃ "শেষ যমানায় পুরো পৃথিবী ব্যাপী একটি যুদ্ধ হবে। এটা হবে দুইটি বড় যুদ্ধের পর তৃতীয় যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধে অনেক মানুষ ধ্বংস হবে।"
♦ ব্যাখ্যাঃ
------------------
এখানে পুরো পৃথিবী ব্যাপী যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, সেটা মূলত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। এটি দুটি বড় যুদ্ধের পর অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, যেটি ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি এবং অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমরিকার হয়েছিল। এই যুদ্ধে মিলিটারি ও সাধারণ মানুষ সহ প্রায় ২ কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল। তারপর ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানি, ইতালি ও জাপানের বিরুদ্ধে ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া, আমরিকার হয়েছিল। এই যুদ্ধে মিলিটারি ও সাধারণ মানুষ সহ প্রায় ৭ কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল।
আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে আগের দুটি বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় অনেক ভয়ংকর হবে এবং এটি হবে পুরো পৃথিবী ব্যাপী।এই যুদ্ধে পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ ধ্বংস হবে। অর্থাৎ বর্তমানে পৃথিবীতে ৮০০ কোটি মানুষ রয়েছে, প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে নিহত হবে। এবং যুদ্ধের সময় ৩০০ কোটি সরাসরি যুদ্ধের কারণে নিহত হবে আর বাকি ৩০০ কোটি নিহত হবে দুর্ভিক্ষ, অনাহারে, চিকিৎসার অভাবে, পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার কারনে। আশ শাহরান এর "আগামী কথন" ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী ২০২৫ সালে। (আল্লাহ ভালো জানেন)
পয়েন্ট ২ঃ "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে ব্যাক্তি আগুন জ্বালিয়ে দিবে সেই হবে মহান নেতা"
♦ ব্যাখ্যাঃ
----------------
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে জাপান যখন আমরিকান নৌঘাটি পার্ল হারবার আক্রমণ করেছিল, তারপরই কিন্তু আমরিকা সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জরিয়ে পরে। কিন্তু ১৯৪৫ সালে হিটলারের মৃত্যুর পর জাপান যখন আত্মসমর্পণ করতে রাজি হচ্ছিল না, তখন আমরিকা জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালায়। তারপরই জাপান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর সুপার পাওয়ার ছিল দুটি, আমরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু শীতল যুদ্ধের পর ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে যায়, তখন পৃথিবীতে একক ভাবে সুপার পাওয়ার হয় আমরিকা।
পয়েন্ট - ৩ঃ " হিজরী ১৩ শতাব্দীর কয়েক দশক পর গ্রীক রাজা সমগ্র বিশ্বের বিপক্ষে যুদ্ধ করবেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে যুদ্ধের নির্দেশ দিবেন"।
♦ ব্যাখ্যাঃ
----------------
হিজরী ১৩ শতাব্দীর তিন দশক পর ১৩৩০ হিজরী অর্থাৎ ১৯১২ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত প্রথম বলকান যুদ্ধে গ্রিস, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, আলবেনিয়ার, মন্টিনিগ্রো একত্রিত হয়ে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তাদেরকে সামরিক সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করে রাশিয়া। এই যুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের বিশাল ভূখণ্ড হাতছাড়া হয়। গ্রিস, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, মন্টিনিগ্রো অটোমান সাম্রাজ্য থেকে বের হয়ে স্বাধীন হয়। এছাড়াও উভয় পক্ষের সাড়ে ৪ লক্ষ আহত ও নিহত হয়।
পয়েন্টঃ-৪ "এর দুই দশক পর জার্মান ভূমি থেকে বিড়ালের নামের সাথে মিল রয়েছে এরকম একজনের (হিটলার) আবির্ভাব হবে। সে রোমানদের বিপক্ষে চাবুক নিয়ে হাজির হবে এবং লোকজনের নির্যাতন করা শুরু করবে এবং পুরো পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে। সে সমগ্র বিশ্বের বিপক্ষে যুদ্ধ শুরু করবে, এমনকি উষ্ণ অঞ্চল (আফ্রিকার সাহারা মরু) ও শীতল (রাশিয়ার সাইবেরিয়া) অঞ্চলেও যুদ্ধ করবে। সে যখন যুদ্ধক্ষেত্রকে আগুন দ্বারা পরিপূর্ণ করবেন, আর তখনই সে আল্লাহ তায়ালার শাস্তির মুখোমুখি হবে, সে রাশিয়ান গুপ্ত ঘাতক দ্বারা খুন হবে।"
♦ ব্যাখ্যাঃ
-----------------
অর্থাৎ হিজরী ১৩ শতাব্দীর তিন দশক পর বা, প্রথম বলকান যুদ্ধের যা ১৯১২ - ১৯১৩ সালে সংঘটিত হয়েছিল এর দুই দশক পর অর্থাৎ ১৯১৩ এর পর দুই দশক বা, ১৯১৩ + ২০ বছর =১৯৩৩ সালে জার্মান ভূমি থেকে বিড়ালের নামের সাথে মিল রয়েছে এরকম একজন ব্যক্তির আবির্ভাব হবে। বাস্তবে জার্মানীতে ১৯৩৩ সালে হিটলার এবং তার দল নৎসী পার্টি ক্ষমতায় এসেছিল। সুবহানাল্লাহ! আপনি যদি গুগলে " Hitler cat " লিখে সার্চ করেন, তাহলে শত শত বিড়ালের ছবি পেয়ে যাবেন এবং বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর উপমা এর যথার্থতা খুজেঁ পাবেন। হিটলার রোমানদের বিরুদ্ধে অর্থাৎ খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে চাবুক বা, অস্ত্র নিয়ে হাজির হবেন।
আপনি জানেন কি? সর্বপ্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের চিন্তা কে করেছিল? যদিও জার্মান বিজ্ঞানীরা ব্যার্থ হয়েছিল, জার্মান বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর পূর্বেই তাদের পারমাণবিক চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটে তাদের পুরো গবেষণাগার পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও সর্বপ্রথম সাবমেরিন তৈরি হিটলারের চিন্তার ফসল ছিল, একই সাথে বর্তমান সব বিখ্যাত গাড়ির কোম্পানি হিটলারের পৃষ্ঠপোষকতায় উন্নত মানের সব মোটরযান আবিষ্কার করে। হিটলার ৬০ লক্ষ ইহুদীদের হত্যা করেছিল, শুধুমাত্র জাতিগত বিদ্বেষের কারনে।
হিটলার ১৯৩৯ সালে পোলেন্ড আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিল, তারপর ফ্রান্স, ব্রিটেন, এমনকি রাশিয়াকে আক্রমণ করেছিলেন। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো দখলের পর ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের উপনিবেশ অঞ্চল উত্তর আফ্রিকাও নিজের দখলে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বুঝতে পারেন, নেপোলিয়ানের মত রাশিয়ার রাজধানী মস্কো আক্রমণ ছিল তার সবচেয়ে বড় ভূল। শীতকালে রাশিয়ানদের পাল্টা আক্রমণে হিটলার আস্তে আস্তে পরাজয়ের দেখা পান। তারপর ১৯৪৫ সালে হিটলারের মৃত্যু হয়, যদিও আমরা এতদিন জেনে এসেছি, হিটলার আত্মহত্যা করেছিল। কিন্তু এই হাদিস থেকে জানতে পারি, হিটলার রাশিয়ান গুপ্তচর দ্বারা রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু বরণ করেন।
পয়েন্ট - ৫ঃ "তারপর হিজরী ১৩ শতাব্দীর সাথে আরো পাঁচ, ছয়, সাত, আট দশক গণনা করার পর মিশরে একজন ব্যক্তি (জামাল আবদেন নাসের) আসবে, যাকে আরবরা সুচ্চাউল আরব বা, আরবের সাহসী ব্যাক্তি বলে ভূষিত করবে এবং যাকে "নাসের" বলা হবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে দুই বার অবজ্ঞা করবেন, একবার যুদ্ধে তারপর আবার। "নাসের " কখনো বিজয়ের দেখা পাবে না"।
♦ ব্যাখ্যাঃ
-----------------
হিজরী ১৩ শতাব্দীর সাত দশক পর ১৯৫৬ সালে মিশরে জামাল আবদেন নাসের ক্ষমতায় আসেন। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তার সাহসিকতার জন্য মিশরের মানুষ তাকে হিরো মনে করেছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে সে ছিল একজন কট্টরপন্থী নাস্তিক, আর আল্লাহ তায়ালা একজন নাস্তিকের হাতে ইসলামের বিজয় দিবেন, এটা যারা ভেবেছিল, তারা ছিল চরম বোকা। জামাল আবদেন নাসের দুইবার ইজরায়েলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছিল, ১৯৫৬ সালে এবং ১৯৬৭ সালে। দুই বারই তিনি পরাজিত হন।
পয়েন্ট - ৬ঃ "তখন সমস্ত ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তায়ালা একজন কালো ব্যাক্তি (আনোয়ার সাদাত) কে পাঠাবেন, যার পিতা তার তুলনায় উজ্জ্বল বর্নের। আরব ও মিশরের নেতা মসজিদুল আকসা ছিনতাই কারীর সাথে একটি চুক্তি করবেন"।
♦ ব্যাখ্যাঃ
-----------------
জামাল আবদেন নাসেরের মৃত্যুর পর মিশরের প্রেসিডেন্ট হন আনোয়ার সাদাত। তিনি দেখতে কালো বর্নের ছিলেন। তার পিতা আনোয়ার মোহাম্মদ আল সাদাত ছিলেন একজন মিশরীয় এবং তার মাতা সিত আল বিরাইন ছিলেন একজন সুদানী বংশোদ্ভূত। মূলত তিনি তার মায়ের মতো একটু কালো ছিলেন। আর তার বাবা ছিলেন মিশরীয় সুদর্শন ব্যাক্তি। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তিনি সিরিয়া ও জর্ডানের সাথে বেইমানী করে ঈসরাইলের সাথে আপোষ করেছিলেন। যারে ফলে ঈসরাইল মিশরকে সিনাই উপত্যকা ফেরত দেয়। অপরদিকে জেরুজালেম এবং গোলান মালভূমি ঈসরাইলের হাতে তুলে দেয়। মূলত হাদিসের এই পর্যন্ত প্রতিটি লাইন বাস্তবতার সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে। আর হাদিসের পরবর্তী অংশটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই হাদিসের শেষ অংশটিও আমরা খুব শীঘ্রই দেখতে পাব।
পয়েন্ট - ৭ঃ "তারপর ইরাকে একজন নিষ্ঠুর শাসকের আবির্ভাব হবে, যে দামেস্কের নিকটবর্তী এলাকায় থাকবে, তার চোখে সামান্য আঘাতের চিহ্ন থাকবে, সেই হল সুফিয়ানী। সে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, পুরো পৃথিবী থেকে তার জন্য লোকজন একত্রিত হবে, কারণ তার সাথে আগে প্রতারণা করা হয়েছিল। সুফিয়ানীর জন্য ইসলাম ছাড়া এরচেয়ে ভালো কিছু থাকবে না, তার মধ্যে খারাপ ভালো দুটি জিনিসই থাকবে, যদিও সে মাহদীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে"।
♦ ব্যাখ্যাঃ
-----------------
এখানে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী দারা (Daraa) ওয়াদিউল ইয়াবেস বা, শুষ্ক উপত্যকা থেকে একজনের আবির্ভাব ঘটবে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যার জন্য প্রতি মাসে ৩০ হাজার লোক জড়ো হবে তার পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য, ঠিক এখন যেভাবে বাশার আল আসাদের জন্য ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাহরাইন, ইয়েমেন ও লেবানন থেকে শিয়ারা যুদ্ধের জন্য সিরিয়া যাচ্ছে।
মূলত এই ব্যাক্তিটি ইমাম মাহদীর সহযোগী কালো পতাকাবাহী দলের বিরুদ্ধে ইরাকের কুফা(মসূল) এবং বাগদাদ শহরে ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড চালাবে। তার চোখে সামান্য আঘাতের চিহ্ন থাকবে, উজ্জ্বল চেহারা, কোকড়ানো চুল, চিকন লম্বা পা, ৪০ বছর থেকে কম বয়সী। সুফিয়ানী তুরস্ক, আমরিকা, আসহাব জাতি (Islamic state), আবকা জাতির (Tuareg Militant) বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। তারপর ইরাকের মসূল ও বাগদাদ শহরে সে ভয়ংকর গনহত্যা চালাবে, পুরো শহরকে সে ধ্বংস করে দিবে।
অবশেষে মক্কায় যখন খলিফা মাহদীর আবির্ভাব হবে, তখন সে মাহদীকে হত্যা করতে ৭০ হাজার সৈন্য বাহিনী পাঠাবে, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বাইদা নামক স্থানে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর কিছুদিনের জন্য সে দেইর আজ জুরের গভর্নরের চাপে মাহদীকে মেনে নিবে, কিন্তু তিন বছর পরেই বনু কাল্ব গোত্রের তার সঙ্গীদের অর্থাৎ বাশার আল আসাদের গোষ্ঠীর লোকজনের কথায় সে মাহদীকে অস্বীকার করবে এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। অবশেষে কাল্বের যুদ্ধে সে নিহত হবে।
পয়েন্ট - ৮ঃ "তারপর হিজরী ১৪ শতাব্দীর সাথে দুই বা, তিন দশক গণনা করবে, ঐ সময় মাহদীর আবির্ভাব হবে। সে পুরো পৃথিবীর সকলের বিরুদ্ধে, যারা বিপথগামী হয়ে গেছে (খ্রিস্টানরা) এবং যারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র (ইহুদীরা) এবং তাদের সাথে ব্যভিচার ও প্রতারণার রানী (আমরিকা) যার পুরো পৃথিবীকে অবিশ্বাসী ও দ্বিধা বিভক্ত করতে চেষ্টা করে, তারা ইসরা ও মিরাজের ভূমি (ফিলিস্তিন) পর্বতের নিকটে আসবে।
তখন ইহুদীরা পৃথিবীতে ভালো অবস্থানে থাকবে, তারা বাইতুল মোকাদ্দাস ও পবিত্র (জেরুজালেম) শহর শাসন করবে। তারা সমুদ্র ও আকাশ পথে তীব্র শীতল অঞ্চল (সাইবেরিয়া) ও তীব্র উষ্ণ অঞ্চল (সাহারা) ছাড়া সবাই তার (মাহদীর) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। মাহদী দেখবে পুরো পৃথিবী তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং সে একই সাথে আল্লাহ্র পরিকল্পনাও দেখবে, যা কাফেরদের ষড়যন্ত্রের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। সে দেখবে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর শাসন ক্ষমতা তার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।এবং পৃথিবীটা হল একটা গাছের মত, যার মূলে রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। "
♦ ব্যাখ্যাঃ
-----------------
হিজরী ১৪ শতাব্দীর দুই বা, তিন দশক পর অর্থাৎ ১৪২০ বা, ১৪৩০ হিজরী অথবা, ১৪০০ এর পর দুই দশক এর পর আরো তিন দশক অর্থাৎ ১৪৫০ হিজরী তে মাহদীর আবির্ভাব হবে।" মাহদীর আবির্ভাবের সময় ব্যভিচার ও প্রতারণার রানী (আমরিকা) ইসরা ও মিরাজের ভূমি (ফিলিস্তিন)আসবে?"
একথার দুটি অর্থ হতে পারে -
১, এর দ্বারা আমরিকার বর্তমান অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অবাধ বিয়ে বহির্ভূত সেক্স, পর্নোগ্রাফির ব্যবসা, পরকীয়া প্রেম, এসব পাপাচারের কথা বলা হয়েছে, Wikipedia এর জরিপে আমরিকার ৮১% মানুষ বিয়ের পূর্বেই শারীরিক সম্পর্ক সম্পন্ন করে ফেলে। আরেক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩% আমরিকান সেক্স করার জন্য বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
২, খলিফা মাহদীর আবির্ভাবের সময়ে আমরিকার একজন নারী প্রেসিডেন্ট থাকবেন, যিনি মাহদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ফিলিস্তিনে আসবেন।
"তখন ইহুদীরা পৃথিবীতে ভালো অবস্থানে থাকবে, তারা বাইতুল মোকাদ্দাস ও পবিত্র (জেরুজালেম) শহর শাসন করবে"। ১৯৬৭ সালে আরব ঈসরাইল যুদ্ধের পর থেকে জেরুজালেম ও মসজিদুল আকসা দখল করে নেয় অভিশপ্ত ইহুদী জাতি। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমাদের প্রথম কিবলার জন্য।
'তারা উষ্ণ (সাহারা) অঞ্চল এবং শীতল (সাইবেরিয়া) অঞ্চল ছাড়া সবাই মাহদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে'। আমরা দেখেছি, ২০০১ সালে আমরিকা এবং NATO যখন আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিল, তখন ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশ সহ প্রায় ১০০ টি দেশ আমরিকার এই বর্বরতাকে সমর্থন দিয়েছিল এছাড়াও ৩০ টি দেশ আফগান সরকারকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করেছিল। তখন রাশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো আমরিকার এই অভিযানের সহযোগী ছিল না। আর ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের ৪২ টি দেশ আমরিকাকে সমর্থন দিয়েছিল।
এছাড়াও ২০১৪ - ১৭ সালে IS বিরোধী যুদ্ধে ৭২টি দেশ আমরিকাকে সমর্থন দিয়েছে। ভবিষ্যতে খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের আবির্ভাব হলে তখনও হয়তো তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য সবাই অভিশপ্ত সুফিয়ানী বাহিনীকে সমর্থন দিবে।
'কিন্তু খলিফা মাহদী দেখবেন কাফেরদের ষড়যন্ত্রের তুলনায় আল্লাহর কৌশল অনেক বেশি শক্তিশালী এবং আল্লাহ তায়ালা শাষন ক্ষমতা মাহদীর দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।' এর অর্থ এরকম হতে পারে- খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দলের উত্থানের সময়ে আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের নিজেদের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে পুরো পৃথিবীর সকল অত্যাচারী, বেইমান, মুনাফিক, মুরতাদ শাসককে ধ্বংস করে দিয়ে পৃথিবীকে নেতৃত্বহীন করে দিবেন, তারপর আল্লাহ তায়ালা তার নিজের পছন্দের ব্যাক্তি খলিফা মাহদীকে শাসক হিসেবে নির্বাচিত করবেন।
পয়েন্ট - ৯ঃ "তিনি সকল অবিশ্বাসী জাতিকে কঠিন দুর্যোগে নিক্ষেপ করবেন এবং তাদেরকে শাস্তি দিবেন। কাফেরদের ভূমি, সমুদ্র ও আকাশ পথকে জ্বালিয়ে দিবেন। অবিশ্বাসী জাতির জন্য আকাশ থেকে ক্ষতিকর বৃষ্টি নিক্ষেপ করা হবে এবং আল্লাহ তায়ালা অবিশ্বাসী জাতিদের কে ধ্বংস করে দিবেন। "
♦ ব্যাখ্যাঃ
---------------
হাদীসের এই অংশে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকর পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে ধ্বংস করবেন, এছাড়াও সকল অত্যাচারী, জালেম, বেইমান, মুনাফিক ও মুরতাদ শাসক ট্রাম্প, নেতানিয়াহু, মোদী, পুতিন, শি জিং পিং, কিং জং উন, জাস্ট্রিন ট্রুডো, মুহাম্মদ বিন সালমান, আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি, জায়েদ বিন নাহিয়ান, হাতফার, বাশার আল আসাদ, আয়াতুল্লাহ খোমেনী, এরদোগান, এঙ্গেলা মার্কেল, শেখ হাসিনা সহ সকল শাসককে ধ্বংস করবেন।
সকল রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান, লিকুদ পার্টি, লেবার পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি, বিজেপি, কংগ্রেস, বাথ পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সমাজতান্ত্রিক পার্টি সহ সকল রাজনৈতিক দলকে আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দিবেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নেতৃত্ব দেয়ার মত কেউ থাকবেনা। তখন সিরিয়ার শাসক অভিশপ্ত সুফিয়ানী হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি। আল্লাহ তায়ালা তাকেও ধ্বংস করে দিবেন এবং অবশেষে খলিফা মাহদীর দিকে শাসন ক্ষমতা ফিরিয়ে দিবেন।
তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কারণে আমরিকা, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, রাশিয়া, আর্মেনিয়া, মিশর, সুদান, ইথিওপিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ঈসরাইল, বাংলাদেশ, মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের ফলে ইউরোনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার কারনে আকাশে কালো মেঘ দেখা দিবে, যার কারণে মানুষ আরো বেশি কষ্ট পাবে। বেশিরভাগ আধুনিক প্রযুক্তি ধ্বংস হবে, মানুষ আবার অতীত যুগে ফিরে যাবে। দুর্ভিক্ষ, অনাহার, ক্ষুধা, চিকিৎসার অভাবে লক্ষ কোটি লোক এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। পৃথিবীর মানচিত্রে হয়তো আমরিকা, চীন এই দুটি পরাশক্তিকে আর দেখতে পাব না।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আশ শাহরানের "আগামী কথন, এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী ২০২৫ সালে এই ভয়াবহ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংঘটিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, যদিও আমরা ভাবছি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়তো শত শত বছর পরে হবে, তাই আমরা আনন্দ ফুর্তি করে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি। তাই আমাদেরকে উচিত খুব শীঘ্রই আল্লাহর নিকট তাওবা করে ইসলামের দিকে ফিরে আসা। আমাদের হাতে থাকা বাকী সময়টাকে আল্লাহর পথে কাজে লাগানো।
Social Plugin